২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:২০:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল
`শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়ে বিএনপিকে উস্কানি দিচ্ছে'
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৩
`শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়ে বিএনপিকে উস্কানি দিচ্ছে'


শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়ে বিএনপিকে অন্য পথে নিয়ে যেতে উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে সারাদেশে দলের দুই ঘন্টার অশান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিয়ে বিএনপিকে অন্য পথে নিয়ে যেতে উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে সারাদেশে দলের দুই ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা প্রদানের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।


তিনি বলেন, আজকে ৫৫০ টি থানা-উপজেলাতে অবস্থান কর্মসূচি ছিলো এবং প্রত্যেকটিতেই পুলিশ বাধা প্রদান করেছে। ঢাকা মহানগরের প্রায় সব জায়গাতে যে নির্দিষ্ট স্থান ছিলো সেই স্থানে কর্মসূচি করতে দেয়নি, ভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেই কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। সংঘাত সৃষ্টি করছে সরকার- আজকে তার প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ এখন আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তারা উস্কে দিয়ে, উস্কানি যেটাকে বলে, প্রোভোক করে আমাদের অন্য পথে নিয়ে যেতে চায়। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি এবং এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, এই আন্দোলন বিরোধী দলের জন্য নয়, এই আন্দোলন হচ্ছে এদেশের মানুষের অধিকারকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, ভোটের অধিকারকে ফিরে পাবার আন্দোলন ৃ. সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে একটা মুক্ত বাংলাদেশে বাস করবার অধিকার আমরা ফিরে পেতে চাই।


গ্যাস-বিদ্যুত-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপি সারাদেশের থানা-উপজেলা পর্যায়ে বিকাল তিনটা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ছিলো। এই কর্মসূচি প্রত্যেক জায়গায় বাধার অভিযোগ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সব জায়গায় আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরেই গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৫০ জনের মতো। যশোরের শার্শাতে কর্মসূচি শুরু করার আগেই পুলিশের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমন করে যশোরের সাধারণ সম্পাদক তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, মফিকুল ইসলাম তৃপ্তিসহ সহ প্রায় ১৫ জনকে সেখানে আহত করেছে। একইভাবে নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।


তিনি বলেন, আপনার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন এই কর্মসূচি শুরু করার প্রথম থেকে বিশেষ রমজান মাসে তারা(ক্ষমতাসীনরা) অনেক মারমুখি হয়ে উঠেছে। ইতিপূর্বে তারা নাটোরে একই ঘটনা ঘটিয়েছে, যশোরে ঘটিয়েছে, খুলনাতেও ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারও করেছে। এর মূল কারণটা হচ্ছে- যারা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয় তারা কাওয়ার্ড সরকারৃ কাপুরষ বলে হয়ত সঠিক হবে না। তারা জনমতকে ভয় পায় । ভয় পায় বলে তারা জনগনের কোনো সমাবেশ করতে দেয় না, জনগনের সামনে দাঁড়িয়ে যে কথা বলবে সেই কথা তারা সহ্য করতে পারে না।


ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ(এ্যাব) আয়োজিত এ্যাবের উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে লন্ডন থেকে স্কাইপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।


পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা কথা বলুন


মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বলতে চাই, এখন যারা শিক্ষিত, বুদ্দিজীবী, পেশাজীবী, যারা সমাজে নেতৃত্ব দেন তাদের বোধহয় সময় এসেছে কথা বলার। কারণ জনগন কথা বলছে। ইতিমধ্যে আমাদের ১৭জন গণতন্ত্রকামী নেতা-কর্মী তারা পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার লোক গ্রেফতার হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার লোক এখনো কারাগারে রয়েছেন। এখন সময় এসেছে আমাদের পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী তাদের সামনে এসে কথা বলার। এই বিষয়টা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।


রাষ্ট্রপতির ভাষন প্রসঙ্গে


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে কেউই একথা বলছে না যে, বাংলাদেশ খুব ভালো আছে, বাংলাদেশ সঠিক পথে চলছে। তাদের নির্বাচিত যে রাষ্ট্রপতি গতকাল তিনি পার্লামেন্টে ভাষন দিয়েছে তার শেষে বিদায়ী ভাষন, সেই ভাষনে তিনি কয়েকটা সত্যকথা উচ্চারণ করেছেন। তার মধ্যে প্রথম যে কথাটা ছিলো- ‘গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন কখনো সার্বজনীন হতে পারে না’। এই কথাটাই আমরা বার বার বলে আসছি। এরপর তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে শিষ্টাচার, পরমত সহিষ্ণুনতা কোনো বিকল্প নাই। আরো তিনি ‘সংঘাত ভুলে ঐক্যমতে পৌঁছানো আহ্বান জানিয়েছেন’। কারণই হচ্ছে যে দল থেকে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন সেই দলই আজকে গণতন্ত্রহীন উন্নয়নের নামে লুটপাট করে দেশকে প্রায় ফোকলা করে ফেলেছে। কারণই হচ্ছে, রাজনীতিতে শিষ্টাচার, পরমত সহিষ্ণুনতার সবচেয়ে অভাব হচ্ছে এই আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা এখন দেশ শাসন করছে।”


ইফতারে দোয়া মাহফিলে আল্লাহ‘র কাছে এজন্য শক্তি ও সাহস কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব। এ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, এ্যাবের মহাসচিব হাছিন আহমেদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


ইফতারে বিএনপি মহাসচিবসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ প্রকৌশলী ও পেশাজীবীরা নেতৃবৃন্দ ছিলেন।




শেয়ার করুন